যৌন দু্র্বলতার সমস্যা ও সমাধান।

 যৌন দুর্বলতা বোঝাতে শারীরিকও মানসিক কারনে যৌন কার্যকলাপের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়াকে বোঝায়। এতে যৌন উত্তেজনা, ইচ্ছা, তৃপ্তি সহ যৌন কার্যকলাপের যে কোন পর্যায়ের সমস্যা হতে পারে। 



সহজ ভাষায় যৌন দুর্বলতা মানে যৌন ক্রিয়ার অংশ নিতে অক্ষমকে বোঝায়।

যৌন দুর্বলতার কারনঃ

বিভিন্ন কারনে মানুষের যৌন দুর্বলতা আসতে পারে। যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অক্ষমতা হতে পারে বা অপর্যাপ্ত পুরুষাঙ্গ উত্থান বা বীর্য স্থলনের কারনে।  নানান মন পীড়ার কারনে এরকম হতে পারে। কিছু কারন উল্লেখ করা হল।

শারীরিক ও মানসিক কারনঃ ডায়াবেটিকসহরমোন জনিত সমস্যা,স্নায়ু রোগ, অতিরিক্ত ওজন, মানসিক চাপ,উদ্বেগ, বিষন্নতা, অতীতে যৌন হয়রানি কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। ইরেকশন জনিত সমস্যা। যখন পুরুষ যৌন মিলনের সময় লিঙ্গের উত্থান ধরে রাখতে পারেনা তখন তাকে ইরেকটাইল ডিসফানশন বলা হয়। এটি বেশি যৌন দুর্বলতার কারন হয়ে থাকে।

অকাল বীর্যপাত ও বীর্য সংক্রান্ত সমস্যাঃ যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অক্ষমতা হতে পারে অপর্যাপ্ত পুরুষাঙ্গ উত্থান।  অথবা দ্রুত বীর্য স্থলনের  কারনে পুরুষের দ্রুত বীর্যপাত হয়ে যায়। বীর্যের পরিমান খুব কম। অনেক সময় সন্তান ধারনে সমস্যা হতে পারে। আমেরিকার ষ্টাডিতে দেখা যায় প‌্রায় ৫২ শতাংশ ৪০ উর্দ্ধ পুরুষই যৌন অক্ষমতায় ভুগছেন। বাংলাদেশে ৩০ এর পরেই অনেক পুরুষই এ দুরবস্থা।

হরমোন জনিত সমস্যাঃ যখন একজন পুরুষ যৌন সম্পর্কে আগ্রহ প্রক্শ করেনা বা কম অনুভব করে এটা যৌন দুর্বলতার কারন। এটি হরমোন জনিত সমস্যা বা মানসিক ক্লান্তির ফলে ও হতে পারে। পুরুষের টেষ্টোস্টোরন  হরমোনের পরিমান কমে যাওয়ার কারনে যৌন দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে টেষ্টোস্টোরন হরমনের পরিমান কমতে থাকে ফলে যৌন দুর্বলতায় আগ্রহ কমতে থাকে।

অর্গানিকঃ স্নায়বিক, হরমোনের কারনে এবং রক্ত চলাচলের সমস‌্যার কারনে। ঔষধ সেবনের কারনে ও যৌন দুর্বলতা হতে পারে। অনেক রকম মন পিড়ার কারনে দুর্বলতা হতে পারে।

যৌন সংক্রমনঃ যৌন মিলনের মাধ‌্যমে সংক্রমন বা ভাইরাস যুক্ত কোন পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে  যৌন মিলন করলে যৌন দুর্বলতা হতে পারে। যৌন মিলনের মাধ‌্যমে সংক্রমন ছড়াতে পারে। যেমন: প্রমেহ, সিফিলিস, গনোরিয়া, এইচ আইভি,এইচ পি ভি ইত‌্যাদি। 

যৌন দুর্বলতার সমাধানঃ 

যে সব খাবর খেলে বা যে কাজগুলো করলে যৌন সমস্যার সমাধান হতে পারে স্বাস্থ‌্যকর খাবার খেতে হবে। নিয়মিত ব‌্যায়াম করতে হবে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে। অতিরিক্ত পরিমান অ‌্যালকোহল ও মদ‌্যপান থেকে দুরে থাকতে হবে। অতিারক্ত গরম ও রেডিয়েশন থেকে দুরে থাকতে হবে। আরও কিছু সমাধান নিম্নে দেয়া হলো ।

ব্যায়ামঃ ব্যয়াম শরীরে প্রতিটি অঙ্গে প্রত্যঙ্গে রক্ত প্রবাহে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে। বিশেষ করে লিঙ্গে রক্ত প্রবাহে শক্তিশালি  ভুমিকা রাখে। ব্যায়াম টেষ্টোস্টোরন হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে মানষিক চাপ ও কমে। সুতরাং ব‌্যায়াম শুধু শারীরিক উপকার করেনা সাথে সেক্সের ও উপকার করে থাকে।

ঘুমঃ প্রতিটি মানুষের জন্য দিনে ৭ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। এতে শারীরিক ও মানষিক ক্লান্তি দুর হয়। শীর ও মন ভাল থাকে। বিশেষ করে প্রাকৃতিক ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। সেই সাথে হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যৌন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

 ধুমপান ও মদ্যপানঃ নিয়মিত  ধুমপান ও মদ্যপান সেবনর ফলে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনে ব্যহত হয়। ধীরে ধীরে সেক্স পাওয়ার কমতে পারে। ধুমপান রক্তনালীকে সংকুচিত করার ফলে যৌন কর্মক্ষমতার নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধুমপান ছেড়ে দিলে যৌন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে পায়। ভারী মদ্যপানে স্নায়ুকে বিষন্ন করে তোলে যা যৌন হরমোন কম কার্যকাতার কারন হয়।

চিকিৎসাঃ

 যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরেনর ঔষধ পাওয়া যায়।  এগুলোর মধ্যে ভারডামেট, ভায়াগ্রা, টায়াগ্রা, পেনজিং। হোমিওপ্যাথিক  এর মধ্যে জিনসেন। এছাড়াও হরমোন থেরাপি, ইনজেকশন, ভ্যাকুয়াম,ইরেকশন ডিভাইন এগুলোর মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। এগুলো ব্যবহারের পুর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

অন্যান্য ঔষধঃযৌন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে  ভেষজ  গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে। বিভিন্ন ভেষজের মাধ্যমে এর প্রতিকার করা যায়। যেমন সাদা লজ্জাবতি,অশ্বগন্ধা, অন্তমুল, শতমুল, রসুন। এগুলো  ব্যবহারের আগে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া ভাল।

যে সব ফলে যৌন শক্তি বাড়ায়ঃ

বেশি বেশি ফল খেতে হবে। যেমন বেদানা, ডালিম,আঙ্গুর খিসমিশ, কাজু বাদাম,কাঠ বাদাম, চিনা বাদাম কমলা লেবু তরমুজ ইত্যাদি। এছাড়া ও কফি,  কম লাল মাংস, মাছ এ খাবার গুলো যৌন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সেই সাথে  শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে ও সহায়তা করে  থাকে।

যৌন শক্তি বাড়ানোর ভিটামিনঃ

কলাঃকলা মানুষের যৌন শক্তি বাড়ায়। কলায় রয়েছে  ভিটামিন বি, সি, এবংব্রোমেলিয়ান এটা শরীরে টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আরও রয়েছে শর্করা যা দেহের শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যার কারনে দীর্ঘক্ষন যৌন মিলন করলে ক্লান্তি আসেনা। 

চকলেটঃ চকলেট শুধু একটি সুস্বাধু  খাবার নয়, এর মধ‌্যে রয়েছে ফেনিলেখিলামিন ও সেরোটোনিন  যা যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এবং শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়াতে সহায়ক।

পুরুষত্ব হীনতাঃ

স্বাস্থ‌্য মন্ত্রনালয়ের জরিপে দেখা গেছে, বয়স্ক পুরুষরা পুরুষত্ব হীনতায় ভুগছে। জরিপে দেখা গেছে তরুনদের চেয়ে বয়স্কদের নিকট যৌন শক্তি বর্ধক ঔষধ বেশি বিক্রি হয়।  দেখা গেছে ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের  মাঝে বেশি বিক্রি হয়।আর ও দেখা গেছে যে তরুনরা পর্নোগ্রাফি দেখে  অসামাজিক ভাবে যৌনতায় উৎসাহিত হয়ে অল্প বয়সে যৌন কাজে লিপ্ত হয়ে যায়। অল্প বয়সে যৌন কাজে লিপ্ত হওয়ায় পরবর্তীতে পুরুষত্ব হারিয়ে ফেলে।

যৌন সংক্রমনের জটিলতাঃ

নিম্নে লিখিত জটিলতার কারনে যৌন সমস্যা হতে পারে। যেমন ব্যথা, সংক্রমনের বিস্তার এবং তিব্রতা, পেনভিক প্রদাহ জনির রোগ, বন্ধ্যাত্ব, ক্যান্সার ইত্যাদি কারনে যৌন সমস্যা হতে পারে।একাধিক অংশিদারের সাথে যৌন কার্যকলাপে জড়িত হওয়া  এটি ও একটি যৌন সমস্যার কারন হতে পারে।

যৌন সংক্রমনের ঝুকিঃ

সেক্সসুয়াল ট্রান্সমিটেড ইনফ্শেন বা ডিজিজ বিভিন্ন কারনে হতে পারে। যেমন প্র্রমেহ, সিবলিশ, ক্ল‌্যামাইডিয়া,ভাইরাসের মাধ‌্যমে ছড়ায় HPV যৌনাঙ্গে হারপিস। যৌন মিলনের মাধ‌্যমে, অন‌্যান‌্য সংক্রমন ছড়াতে পারে। ছাড়া বাইরে কোথাও যৌনতায় লিপ্ত হওয়া,যৌন সংক্রমনের ঝুকি বাড়াতে পারে।  এই রোগ গুলি যৌন মিলনের মাধ‌্যমে সংক্রমন ছড়ায়।    

 শেষে বলা যায় এগুলো অবস্থা কারন ও পরিনতির উপর  নির্ভর করে। কিছু ক্ষেত্রে ঔষধ ছাড়াই নিরাময় যোগ্য। সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যভ্যাস অনুশীলনে অনেকটা সমাধান হতে পারে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ইমা ম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url