অতিরিক্ত ঘামের কারন ও তার সমাধান।
অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার অনেক কারন রয়েছে।এবং তার প্রতিকারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত কারন গুলোর মধ্যে রয়েছে তাপ মাত্রা বৃদ্ধি ও কিছু রোগের প্রভাব। যেমন থাইরয়েড সমস্যা,ডায়াবেটিস, কিছু ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া।
প্রতিকারের জন্য হাল্কা পোষাক পরা, পর্যাপ্ত পানি পান করা। শরীর ঠান্ডা রাখা। এর পর ও অতিরিক্ত ঘাম হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ঘামের কারনঃ
অতিরিক্ত শরীরে ঘাম হওয়া যেমন কোন ঔষধের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। শরীরে মধ্যে থাকা অন্য কোন রোগের কারনে ও হতে আবার তেমন কোন কারন ছাড়া এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ঘামের কারনে যে সমস্যা হয়ে থাকে তা নিম্নে দেয়া হলো।
তাপমাত্রা বৃদ্ধিঃ শরীরের যে কোন অংশে ঘাম হতে পারে। আবহাওয়া অতরিক্ত গরম থাকলে বা শারিরিক পরিশ্রম করলে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হওয়া স্বাবাবিক। আবহাওয়া কারনে অতিরিক্ত তাপ মাত্রা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত
হাটা,চলাফেরা,কঠোর পরিশ্রম, গরম আদ্র আবহাওয়ার কারনে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
মানুষিক চাপঃ অতিরিক্ত মানষিক চাপ, উদ্বেগ বা মানুষের অতিরিক্ত আতঙ্কের কারনে ঘাম হতে পারে। মানুষ যখন অতিরিক্ত রেগে যায় ,মানষিক চাপ বেড়ে যায়। তখন রক্ত দ্রুত গতিতে চলাচল করে । তার ফলে মানুষরে শরীর থেকে ঘাম ঝরতে থাকে।
খাবার নিয়ন্ত্রনঃ অতিরক্তি মসলা যুক্ত ও তৈলাক্ত খাবার, অতিারক্ত চা কফি খাওয়া যাবেনা। ধুমপান ও অ্যালকোহলে স্বাভাবিকের চেয়ে শরীর ঘামে বেশে। তাই এগুলো পরিহার করতে হবে।ক্যাফেন অ্যালকোহল ঘাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এ কারনে এগুলো পরিহার করাই শ্রেয়।সেই সাথে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহন করে ওজন নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
কিছু রোগের কারনঃ থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, ডায়াবেটিস, স্থুলতা,মেনোপজ,অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনে অস্তিকে উদ্বীপ্ত করে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি করতে পারে।থাইরয়েড হরমোনের সমস্যার কারনে অতিরিক্ত ঘাম হয়। শরীরিক পরিশ্রম, রাগ উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তার কারনে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া স্বাভাবিক।
ইনফেকশন,ডায়াবেটিস: কিছু সংক্রমন রোগ যেমন যক্ষা, এন্ডোকার্ডাইটিস এর কারনে ঘাম হতে পারে। ডায়াবেটিস,রোগিদের মধ্যে স্নায়ুর সমস্যা বা রক্তের শর্করার মাত্রা উঠা নামার কারনে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। বংশগত কারনেও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
মোনপজ বা পেরি মনোপজ: রাতে খুব বেশি ঘাম হয়। সাধারনত হরমোনের কারনে। পেরিমনোপজ বা মনোপজের মধ্যে দিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ মহিলাদের মধ্যে গরম ঝলকানী এবং নিশাচর ঘাম সাধারন।মনোপজের সময় উঠানামা করা ইস্ট্রোজেনের মাত্রা গরম ঝলকানি এবং রাতের ঘাম শুরু করে।
গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় রাতের ঘাম হরমোনের মাত্রা উঠা নামার কারনে ও হতে পারে। প্রথম ত্রৈমাসিক (সপ্তাহ ১থেকে ১৪) এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিক( প্রসবের মাধ্যমে সপ্তাহ ২৭) হল গর্ভাবস্থা সম্পর্কিত রাত্রিকালিন ঘামের জন্য সবচেয়ে সাধারন সময়। বা ডায়াবেটিসের মত অবস্থার কারনেও মহিলাদের রাতে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘামের সমাধানঃ
ঘাম সম্পুর্নরুপে প্রতিকার করা সম্ভব নয়। তবে কিছু পদ্ধতি অনুসরনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। বাতাস চলাচল করতে পারে এমন পোষাক পরা। আদ্রতা শুষে নেয় এমন মোজা পরা। বাতাস চলাচল করে এমন মোজা ব্যবহার করা। শরীর পরিস্কার রাখতে নিয়মিত গোসল করা। ঘাম বিরোধী প্রসাধনি ব্যবহার করা।
পানি পান করাঃ প্রতিটি মানুষের প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ লিটার পানি পান করা উচিত। আরও ওরস্যালাইন, গ্লকোজ,শরবত এ গুলো পান করা উচিত। স্যালাইন শরীর হইতে লবনাক্ত পানি বের হওয়ার কারনে শরীর দুর্বল হয় সেটা স্যালাই পুরন করে। হাইড্রোয়েড রাখা যাতে শরীরে তাপমাত্রা সাভাবিক রাখতে পারে।ব্যায়ামের পর শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে।
অতিরিক্ত ঘাম হলে চিকিৎসাঃ
দৈনিক অতিরিক্ত ঘাম হলে সেটা বিরক্তির কারন ও অস্বস্থি বোধ হয়। কাজের ব্যাহত হয়। হটাৎ করে ঘাম হলে কোন রোগের কারন হতে পারে। ঘাম হইতে অব্যাহতির জন্য চিকিৎসক কিছু ঔষধ লিখে থাকেন। যেমন: ভিটামিন ডি, বি-১, বি-২, বি-৩,বি-৫,বি-১২।
প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ
অতিরক্তি ঘাম হলে প্রাকৃতিক খাবার খেলে অনেকটা ভাল থাকা যায়।যেমন: পাকা পেপে,আম,গাজর, তরমুজ,শাকসবজি, ফলমুল। বেশি বেশি পানি পান করুন।বেশি বেশি মুখ, হাত, পা ধুয়ে ফেলুন।এতে অনেকটা ভাল থাকা যায়।
মেথীর উপকারিতাঃ
মেথীর উপকারিতার শেষ নেই। মেথী ভিজানো পানি সকালে খালি পেটে খেলে শরীরের ভিতরের টক্সিন পদার্থ বের হয়ে যায়। এর ফলে কোন ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন আর ছড়াতে পারেনা। শরীরের ভিতর থেকে টক্সিন পদার্থ বের করে দুর্গন্ধ দুর করে । ঘামের সমস্যা প্রতিরোধে রাত্রে দুই চামচ মেথী এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। সকালে খালি পেটে মেথী ভিজানো পানি পান করলে সুফল মিলবে।সেই সাথে গায়ের দুর্গন্ধ দুর হবে।
নিম পাতার গুনাগুন
নিম পাতায় রয়েছে বহু গুনাগুন। নিম পাতায় রয়েছে এ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও এ্যানিাটসেপটিক ধর্ম। যেটাকে কাজে লাগালে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারি ব্যাক্টেরিয়াকে ্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্ধংস করতে পারে। কিছু নিমের পাতা ফুটানো পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এতে ও অতিরিক্ত ঘামের দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এছাড়াও নিমের পাতা বেটে দুর্গন্ধ যুক্ত স্থানে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর গোসল করলে ও ফলাফল পাওয়া যাবে।
হেমিও চিকিৎসাঃ
অতিরিক্ত ঘামের কারনে হোমিও চিকিৎসকগন যেসকল ঔষধ দিয়ে থাকেন। ঘামের গন্ধ যদি রক্তের মত হয় তাহলে= লাইকো পডিয়াম। আর যদি পচা গন্ধ হয় এর জন্য=ষ্ট্যাফিসেগ্রিয়া।ঘামে পেয়াজের গন্ধ বের হলে=বোরাক্স। আর যদি কর্পুরের মত গন্ধ হয় =ক্যাস্ফার। আরও গন্ধকের মত গন্ধবের হলে=ফস্ফোরাস। আরও গন্ধ অনুযায়ী ঔষধ চিকিৎসকগন ব্যাবহার করে থাকেন।
কেন রাত্রে ঘাম হয়ঃ
হাইপারহাইড্রোসিস এর কারনে রাতে ঘাম হতে পারে। এছাড়াও গরম জাতীয় জামা, কাপড় গায়ে জড়িয়ে ঘুমালেও অতিরিক্ত ঘাম হতেপারে। যেমন কম্বল, গায়ের চাদর, বা গরম ঘরে ঘুমানো। অথবা হরমোন জনিত কারনেও রাত্রে গাম হতে পারে।
রাতে ঘাম হলে কি হয়ঃ
রাতে অতিরিক্ত ঘাম হলে ওজন হ্রাস পায়। সেই সাথে জ্বর, ঠান্ডা লাগতে পারে। অতিরিক্ত ঘামের কারনে রাত্রের ঘুম ব্যাহত হয়। এর ফলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত ঘাম সমস্যা মনে হলে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
পরিশেষে বলা যায় অতিরিক্ত ঘাম একটি সাধারন সমস্যা সেই সাথে কোন রোগের লক্ষন হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ঘাম হলে প্রতিকার গুলো মেনে চলা প্রয়োজন। সেই সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ইমা ম্যাক্স আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url